*~পথ~*

লিখেছেন লিখেছেন জিহর ০৪ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:২০:১৬ রাত

লিখা : তালুকদার জহির

১.

সামনে পূজোয় অফিস তিনদিনের ছুটি ।

এই ছুটিটা কিভাবে কাটাবো একটু ভাবছিলাম...। হঠাৎ কাজিনের কাজিন ( মামাতো ভাইয়ের খালাতো ভাই ) ভার্সিটি বন্ধু + সহোকর্মি আসিফ ফোন দিলো যে, আমাকে ওর বিয়ে উপলক্ষে ওদের গ্রামের বাড়ি যেতে হবে। দুদিনের এক্সট্রা ছুটি কাটাতে ।

বিষয়টা আমাকে আগেই বলে রেখেছিল। কিন্তু ভুলো গিয়েছিলাম..! এই অসাধারন অফারটা মিস করতে ইচ্ছে হচ্ছিল না । আম্মুকে বলে আসিফের সাথে রওনা দিলাম । আম্মু অবশ্য আমার চেয়ে একটু বেশি আগ্রহি ছিলো । যা আমি পরে জানতে পেরেছিলাম ।

২.

বাসাথেকে বেরবার আগে আম্মু ব্যাগ গুছাবার সময় বলছিলো, আর কতো তোর ব্যাগ গুছাবো ? এবার একটা বিহিত কর.! আসিফ তো বিয়ে করছে...

আমি : আম্মু, পরে এসব নিয়ে কথা হবে । আজ আসি ।

আমরা অফিস শেষ করে সোজা রওনা হলাম আসিফের গ্রামের বাড়ি নড়াইলের উদ্দেশ্যে...!

আমাদের পৌঁছুতে রাত ১১ বেজে গেল ।

৩.

গ্রামের বিয়েবাড়ি গুলোতে একটু ভিড় ভাট্টা বেশিই হয়। ওদিকে আবার আসিফের দু'বোন ছানা- পোনা সমেত দুই রুম কবজা করে আছে। ফলে আমার পজিশন আসিফের ছোট চাচার ঘরে। ছোট চাচা, আশরাফ সাহেব রিটায়ার্ড সরকারি কর্মকর্তা , বিপত্নীক । আগে খুলনা ছিলেন । তার শুধু তিনটি মেয়েই । দুটোর বিয়ে হয়েছে সেই খুলনাতেই । আর ছোটটা ঢাকায় বড়ো খালার বাসায় থেকে অনার্স করছে । একজন মহিলা দু বেলা রান্না করে দিয়ে যায় । এই ছোট্ট তথ্যটা মাত্র দু মিনিটেই দিল আসিফের গ্রামের বন্ধু নাজমুল ওরফে নাজু । নাজু অবশ্য আমাকে ওদের বাড়ি থাকার অফার করেছিল। একটু দূর বলে যাই নি। আমি আশরাফ চাচার বাড়িতেই রাতে ঘুমাবো বলে ঠিক করলাম..!

আশরাফ চাচা সদালাপি, গল্প প্রিয় । সাধারনতো মুরব্বীরা যেমন উপদেশ দেয়, তিনি তার থেকে ব্যাতিক্রম। আমাকে পেয়ে যেন একটু খুশি তিনি । গল্প করতে পারবেন ।

৪.

বিয়ে বাড়ির সকাল মনে হয় একটু তাড়াতাড়ি শুরু হয় ।

কিন্তু আমি সেই ৯ টা বাজিয়ে উঠলাম । তাও নাজুর ডাকে । যদিও আমার কোন কাজ নেই, কিন্তু সকালে নাস্তা করতে হবে বলে আসিফ ডেকে পাঠিয়েছে । রাতে জার্নির ক্লান্তিতে ঘুমটা বেশ গাড়ই হলো । ফ্রেশ হয়ে আসিফদের বাড়িতে গেলাম । নাস্তা করার পর আর কোন কাজ নেই । ডিজগস্টিং....পুরোই বোর!

মোবাইল বের করে আম্মুকে, আর বড়াপুকে ফোন দিলাম । কথা শেষ । এখন কি করি, কি করি? ফেবুতে একটা ঢু মারলাম । একটা নিউ রিকুয়েস্ট এঞ্জেল মুক্তা নামের ( বার্বির ছবি দেয়া ), কিছু নটিফিকেশান, দুটো লাইক আগ্রহিদের ম্যাসেজ ( plz like my pro pik bro ) টাইপের । কয়েকটা বন্ধুদের পোস্ট ঘেটে ফেবুর ডিউটি শেষ । রিকটা ঝুলিয়েই রাখলাম । আমি মনে করি মেয়ে আইডি বেশির ভাগ ফেইক হয়.... তাই ।

৫.

মেহমান বলে, আমাকে কোন কাজই ধরতে দিচ্ছে না। একটু পর দেখি আশরাফ চাচা এসেছেন ..! তিনি হয়তো আমাকে সঙ্গ দেবার জন্য গল্প শুরু করলেন । তার কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা, বউকে নিয়ে ঢাকা বেড়ানোর স্মৃতি, বউয়ের সাথে শংসার যাপনের কথা , রাজনীতি, খেলাধুলা সহো বহু কিছু কেন্দ্র করে আমাদের দু জনের একটা লম্বা আড্ডা হলো, একেবারে দুপুর পর্যন্ত । ওদিকে আসিফের দেখাই মেলা ভার । একটু চেহারা অবশ্য মাঝে মাঝে দর্শন দিয়ে যাচ্ছে । কি আর করা, দুপুরে খেয়ে আবার আসশরাফ চাচার বাসায় ব্যাক করে ঘুম2 শুরু করলাম ।

কিন্তু ঘুমটা আশানুরূপ লম্বা হলো না । কে যেন আমি যে রুমে ঘুমিয়েছি, সেখানে এসে শব্দ করছে । আধো-ঘুম আধো-জাগা চোখে খুব স্পষ্ট দেখতে পারছি না। তবে সেটা যে একটা নারীমুর্তি, তা অনুমান করতে পারলাম । একটু পরে বিছানার পাশে এসে বললো, এই যে শুনছেন, হলুদের ফাংশন শুরু হলো বলে । তাড়াতাড়ি উঠুন ! আপনাকে ভাইয়া আসতে বলেছে...! আমি চোখ ডলতে ডলতে উঠে বসলাম...!

অস্পষ্ট ভাবটা কেটে যাবার সাথে সাথেই আমার চোখ আটকে গেল সামনে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটার চোখে । সে তখনো হয়তো কিছু বলছিল । যা আমার কানে যাচ্ছে না । আমি অপলক নয়নে তাকিয়ে আছি তার দিকে । চোখ দুটো যেন কি দিয়ে তৈরি ? ও ভাবেই তাকিয়েছিলাম , আর মেয়েটা আমায় তাগাদা দিচ্ছিল । হঠাৎ সে এগিয়ে এসে আমার চোখের সামনে হাত নাড়তে লাগলো । এতোক্ষনে বাস্তবে ফিরলাম, এবং একটু বিব্রত বোধ করলাম । বললাম , আমি আসছি ! একটু ফ্রেশ হতে হবে । সে চলে গেল । কিন্তু যাবার সময় এক চিলতে হাসি উপহার পেলাম তার টোল পড়া গালের । এবং আমি মনে হয় ফাইনাললি ক্রাশিত হলাম ঐ হাসিটা দেখে ।

৬.

গায়ে হলুদের আয়োজন সাদামাটা ভাবেই সম্পন্ন হলো । বরের সাথে দু চারটা ছবি পোষ্ট করলাম ভার্সিটি ফ্রেন্ডদের সাথে ট্যাগ দিয়ে ।

সন্ধার পর আসিফের সাথে ওদের এলাকার বাজারে গেলাম চা খেতে । নতুন জামাই কে অনেকেই অভিনন্দন জানাচ্ছে । বাজার থেকে ফিরে রাতের খাবার শেষে আবার আশরাফ চাচার বাসায় ফিরলাম । তিনি দরজায় সামনে চেয়ারে বসে আছেন । সালাম দিয়ে কিছুক্ষন কথা বলে শোবার ঘরে গেলাম । আজ এ ঘরটা বেশ গোছানো মনে হচ্ছে । বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম....! কিন্তু ঘুম আসছে না । দুপুরের ঐ মেয়ের কথা মনে পড়লো । সারা দিনের ব্যাস্তায় ভুলেই গিয়েছিলাম । হলুদ ফাংশনে মেয়েটাকে কয়েকবার দেখেছি । হালকা সাজে হলুদের সাড়ি পরেছিল । অসাধারন রূপবতী না হলেও চোখ দুটো নজর কাড়া, কেমন যেন মায়া আছে চোখে । এরই মধ্যে কখন যে ওর একটা নামও দিয়ে ফেলেছি আমি ,টের পাইনি । "সুনয়না" । হ্যা সুনয়না'ই ওর নাম...

মেয়েটার পরিচয় জানা দরকার । বেশ কিছুক্ষন চিন্তা ভাবনা করে বুদ্ধি বের হলো । আসিফ কে বলতে হবে, কিন্ত কাল বিয়ে + বাসর । মনেহয় আজ রাতে ফুল বেড রেস্ট করবে বলে মোবাইল অফ দিয়েছে । এদিকে আমার ঘুম কিছুতেই আসছে না । শেষ মেষ ফেবুতে ঢু মারলাম । কিছু বন্ধু কমেন্ট করেছে আসিফ কেন্দ্রীক । ৮টা মেসেজ এসেছে । খুলতেই দেখি সব কটা সেই এঞ্জেল মুক্তার মেসেজ । রিক ঝুলিয়ে রেখেছি কেন? আমি কি খুব মুডি কিনা । একসেপ্ট না করলে যেন ''রিক''টা ডিলিট করে দেই, ইত্যাদি ইত্যাদি....

৭.

আমি সাধারনত অপরিচিত কাউকে ফ্রেন্ড করি না । সেটা আমার প্রোফাইলে লিখে রেখেছি । তারপর যে "রিক"টা দিয়েছে, তার নিজের ছবিও নেই । কিন্তু কেন যেন এর সাথে একটু চ্যাটিং করতে ইচ্ছে হলো । তাই আমি নক করলাম । সাথে সাথেই উত্তর... মনে হয় মোবাইল হাতে নিয়ে বসেছিল । সাভাবিক কথাবার্তা হলো । একবার ভাবলাম পরিচয় পর্ব শুরু করি । কিন্তু , মন সায় দিলো না । ধুর... ফেইক বা রিয়াল যাই হোক , টাইম পাসতো করা যাচ্ছে ।

কিছুসময় কথা বলে চ্যাটিং করে, রিকটা একসেপ্ট করলাম । সাথে টাইম লাইনেও একটা ঢু মারলাম । অবাক করার বিষয় হলো, "এঞ্জেল মুক্তা"র টাইম লাইনে আসিফে'র গায়ে হলুদের ছবি । সব চেয়ে বেশি যেটা ভালো লাগলো , তা হলো আসিফকে হলুদ দেবার সময় ওর সাথে আমার নিজের কোন ছবি তোলা হয়নি । সেই অভাব পুরন হলো এই টাইম লাইনে এসে । প্রচুর ছবি পোস্ট করা , যার ভেতরে আজকে দুপুরের সেই সুনয়না'র ছবি ও আছে । তার মানে দুইয়ে দুইয়ে চার । এই "মুক্তা"ই আসিফের চাচতো বোন । মানে আশরাফ চাচার মেয়ে । খুশি, আনন্দ, সাথে কৌতুহল এক হলো ( দিলমে বহুত বড়া লাড্ডু ফুটা )। আগামি কাল বেলা ১২ বর যাত্রী যাবে । যা করার কালই করতে হবে । এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি, টেরই পাইনি ।

৮.

আজ ভোরে সূর্যোদয়ের পূর্বে ঘুম ভাঙ্গলো । নামজ পড়ে হাটতে বেরলাম । গ্রামের ভোর এতো সুন্দর কল্পনা করা কঠিন । সূর্যটা যেন ফসলের মাঠের ওপাশে ধানেরশিসে ভর করে উঠে ।

সকালে নাস্তা আজ আশরাফ চাচার সাথে করতে বলেছেন রাতেই । মুরগি-খিচুড়ি রান্না হয়েছে , সাথে ডিম ভাজা । অসাধারন লাগছে খিচুড়িটা । বাবুর্চির প্রসংশা করালাম । চাচা জানালে যে, এটা তার মেয়ের হতের রান্না, সঙ্গে সঙ্গে চেচিয়ে বললেন মুক্তা মামুনি ! আরো নিয়ে আয়...মেহমানের পছন্দ হয়েছে..! আমি না করলেও কাজ হলো না । মুক্তা আরো কতোক্ষানি নিয়ে হাজির..! খিচুড়ির অসিলায় আমার একঢিলে কয় পাখি যে মরলো, বলে বোঝাতে পারবো না..!

আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম খাবার প্লেটটা হাতে রেখেই যে, এই বাবুর্চির রান্নাঘর আমার বাসায় স্থানান্তরণ করতে হবে যে করেই হোক...! তাই লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে আসিফ কে বললাম বিষয়টা..! ও বললো পরে জানাবে । আর বেশি তাগাদা থাকলে নিজেই যেন চাচার কাছে প্রস্তাব দেই...

৯.

ঐদিন যথারিতি বিয়ে সম্পন্ন করে বউ উঠিয়ে আনা হলো । বরের ছুটি কম , তাই পরদিন বউভাত শেষ হতে না হতেই বউ সমেত ঢাকা ফেরা হচ্ছে। একটা মাইক্রোতে করে ফিরছিলাম আমরা । আসিফের বড়োভাগনি সামনের সিটে । মাঝে বর কনের সাথে আন্টি , বসেছেন । মুক্তা ওরুফে সুনয়না আর আমি বেচারা পিছের ঐতিহাসিক ঝাকিময় ছিটে...! আসিফ গাড়িতে ওঠার আগেই আমাকে কতোগুলো টিস্যু এবং একটা পলিথিন ধরিয়ে দিয়ে বললো রাখ, পরে কাজে লাগবে ।

আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালে ও শয়তানি হাসি দিলো । কতোদুর যাবার পর রাস্তায় লক্কর ঝক্কর ময় ২ কি'লো' পথ আছে , যেখানে মেরামতি কাজ চলছে । আসিফের ষড়োযন্ত্র -টা টের পেলাম এই যায়গায় এসে।

আমার একটা বাজে সভাব হলো যে, যদিও আমি লং ট্রাভেলিংয়ে বমি টমির ঝামেলায় পড়ি না, কিন্তু কাউকে দেখলে আমার ১২ টা বাজে । আজও তাই হলো...

মুক্তা ব্যাগ হাতড়ে কিছু না পেয়ে আমার প্যান্ট সমেত পা দিলো মাখিয়ে । আমার মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে। আমি পলিথিনটা দেবারো সুজোগ পেলাম না...! ড্রাইভার সাহেবকে দ্রুতো গাড়ি থামাতে বললাম... রাস্তার পাশে গাড়িটা সাইড করা হলো । সাথে থাকা খাবার পানি দিয়েই পরিষ্কার হলাম আমরা । আসিফ ভণ্ডটা একটুর জন্য মুক্তা এবং নতুন বউয়ের সামনে আমার ইজ্জতের ফালুদা করে ফেলতো । একটুর জন্য আল্লাহ বাচিয়েছেন । আমি মুক্তাকে পানি ঢেলে হেল্প করলাম । সাথে কয়েক টিস্যু ধরিয়ে দিলাম, অন্যরা নিজেদের মাঝে কথায় ব্যাস্ত । যেটা গাড়িতে বলা যাচ্ছিল না , সেটা এই সুজগে ছোট্ট করে বলে দিলাম মুক্তা ওরুফে সুনয়না কে... বললাম* আমাকে কি আজীবন আপনার পথের সঙ্গী করা যায়..! যাতে পানিঢেলে আপনাকে হেল্প করতে পারি...!

ও আমার দিকে হয়তো তাকিয়েছিল সেই মায়াবী চোখ দুটো দিয়ে । আমি তখনো একটু একটু করে পানিঢেলে যাচ্ছি ওর হাতে । হয়তো ও কিছু বলতে যাচ্ছিল এবং আমিও সেটা শোনার অপেক্ষা করছি । ঠিক এমন সময় সিনেমার ভিলেনের মতো আসিফের এন্ট্রি...! পুরো ফিলিংসটাই বরবাদ । বললো, কিরে তাড়াতাড়ি কর.... গাড়ি ছেড়ে দেবেতো ।

ধুর্ কেনো যে টাইমিংটা পার্ফেক্ট হয় না...

আমরা আবার যে যার যায়গায় ফিরে এলাম..! গাড়িটা ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা করলো ।

আর আমি কানে হেডফোনটা গুজে মনের দুঃখে শুনতে লাগলাম :

এই পথ যদি না শেষ হয়

তবে কেমন হতো তুমি বলোতো......

.

বাই : তালুকদার জহির

বিষয়: বিবিধ

১০৩৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

379429
০৪ নভেম্বর ২০১৬ সকাল ০৫:৩১
স্বপন২ লিখেছেন :

ভালো লাগলো / ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File